AGRICULTURE
সূচনা
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্য প্রয়ােজন। আর এ খাদ্য আসে কৃষিকাজের মাধ্যমে। একসময় কৃষিকাজ হতাে গতানুগতিক পদ্ধতিতে। তখন চাষাবাদ তথা খাদ্য উৎপাদনে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হতাে। বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি বর্তমানে এক্ষেত্রে কষ্ট কমিয়ে দিয়েছে। কিছু কিছু দেশে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি কৃষিতে রীতিমতাে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।
অধ্যাপক জিমারম্যান বলেছেন, জমিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে মানুষ যখন উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের স্বাভাবিক জন্ম ও বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রয়ােজন মেটানাের জন্য উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ দ্রব্যাদি উৎপাদন করে, তখন সেই উৎপাদন প্রক্রিয়াকে কৃষিকাজ বলে। শস্য উৎপাদন, পশুপালন, বনসৃজন, মৎস্যচাষ, পশম উৎপাদন প্রভৃতি কৃষিকাজের অন্তর্গত।মানব সভ্যতার উন্নয়ন উত্থানে কৃষির ভূমিকা অপিরিহায্য় ,, যার ফলে গৃহপালিত প্রজাতির চাষ করে খাদ্য যোগান তৈরি করে, মানুষকে শহরে বসবাস করতে সক্ষম করেছে । কৃষির ইতিহাস হাজার হাজার বছর আগে শুরু হয়েছিল। কমপক্ষে 105,000 বছর আগে শুরু হওয়া বন্য শস্য সংগ্রহের পর, নবজাতক কৃষকরা প্রায় 11,500 বছর আগে তাদের রোপণ শুরু করেছিলেন।শূকর, ভেড়া এবং গবাদি পশু 10,000 বছর আগে গৃহপালিত হয়েছিল। বিশ্বের অন্তত 11টি অঞ্চলে গাছপালা স্বাধীনভাবে চাষ করা হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীতে বৃহৎ আকারের মনোকালচারের উপর ভিত্তি করে শিল্প কৃষি কৃষি উৎপাদনে আধিপত্য বিস্তার করে, যদিও প্রায় 2 বিলিয়ন মানুষ এখনও জীবিকানির্ভর কৃষির উপর নির্ভরশীল।
মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব
মানবজীবন ও মানবসমাজে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে এটি মানুষের আদিমতম জীবিকার উপায়। দেশে দেশে কৃষিই সমাজের মেরুদণ্ড, কৃষিই সমাজের ভিত্তি। সংগত কারণেই কৃষির ক্রমােন্নতিতেই সমাজের ও দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি। এই উন্নতিতে অনন্য ও অভাবনীয় সূচনা রেখেছে বিজ্ঞান। আজকের বিশ্বে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতাে কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞান তার সুদূরপ্রসারী কল্যাণী হাত।
কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান
আঠারাে শতকের শেষদিকে এবং উনিশ শতকের শুরুর দিকে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে। এর ফলে কৃষকেরা কৃষিক্ষেত্রে উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি ও কৃষিপদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়। জন্তু আর কাঠের লাঙলের পরিবর্তে কৃষকদের হাতে আসে কলের লাঙল, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। বিজ্ঞানের কল্যাণে উন্নত দেশগুলােতে জমিকর্ষণের পুরােনাে পদ্ধতিগুলাে লােপ পেয়েছে। বিজ্ঞানের উদ্ভাবন সেচ ব্যবস্থাতেও বহুবিধ পরিবর্তন এনেছে। কৃষকদের এখন বৃষ্টির জন্যে প্রকৃতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে জমিতে পানিসেচের ব্যবস্থা করতে পারে। এক্ষেত্রে সেচের জন্যে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎশক্তিচালিত পাম্প। অতিবৃষ্টিও আজ কৃষককে ভীত করছে না। বিজ্ঞানের বদৌলতে জমির অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন আজ অত্যন্ত সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করেছেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণা উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে কৃষিক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখছে তাও অভাবনীয়। বিশেষ করে কৃত্রিম উপায়ে উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদনে সাফল্য বিস্ময়কর। এসব বীজ সাধারণ বীজের তুলনায় ফসল উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে সময়ও কম নেয়। সুতরাং বীজ নিয়ে কৃষকদের অতীতের অনিশ্চয়তা দূর করেছে বিজ্ঞান। শক্তিশালী রাসায়নিক সার আবিষ্কৃত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। সাম্প্রতিককালে বিশ্বের বৃষ্টিহীন শুষ্ক মরু অঞ্চলে চাষাবাদ শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে বিজ্ঞানের সহায়তায়। সেদিন দূরে নয় যেদিন এক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা সফলতা লাভ করবেন।
উন্নত বিশ্বের কৃষি
উন্নত দেশগুলাের কৃষিব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞাননির্ভর। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তােলা পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক কৃষিযন্ত্র, যেমন- মােয়ার (শস্য-ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র), গ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্প্রেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র) ইত্যাদি উন্নত দেশগুলাের কৃষিক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ হচ্ছে কেবল এক-একটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে। সেগুলাে আবার একসাথে তিনচারটি ফসল কাটার যন্ত্রকে একত্রে কাজে লাগাতে সক্ষম। তারা বিভিন্নভাবে কৃষিকাজের এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে যার ফলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে অগ্রগামী। যেমন বলা যায় জাপানের কথা। জাপানে জমির উর্বরাশক্তি বাংলাদেশের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে তারা এ দেশের তুলনায় ৬ গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করছে।
কৃষি ও ভারত
বর্তমানে ভারত কৃষি উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, দেশের জিডিপি-তে কৃষি এবং বনবিদ্যা, কাষ্ঠশিল্প ইত্যাদি কৃষি-সহায়ক ক্ষেত্রগুলির অবদান ১৬.৬ শতাংশ। ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৫২ শতাংশই এই ক্ষেত্রে নিযুক্ত। জিডিপি-তে কৃষিক্ষেত্রের অবদান বর্তমানে অনেকটা কমলেও, এই ক্ষেত্র আজও ভারতের বৃহত্তম অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী।
দুগ্ধ, কাজুবাদাম, নারকেল, চা,পাট, আদা, হরিদ্রা ও কালো মরিচ,আম, লেবু,পেঁপে,ফুলকপি , উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম। কফি উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। গবাদি পশুর সংখ্যার হিসেবেও ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম (২৮১,০০০,০০০)। গম, ধান, আখ, চিনাবাদাম,পেঁয়াজ ও অন্তর্দেশীয় মৎস্য উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। তামাক উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে তৃতীয়। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ফলের ১০ শতাংশ ভারতে উৎপাদিত হয়। কলা ও সাপোটা উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম।
ভারতে ধান ও গম উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।
উপসংহার
বিজ্ঞান আজ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। উন্নত দেশগুলােতে বিজ্ঞানের সাহায্যে পাহাড় কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করে বিভিন্নভাবে কৃষিজমি তৈরি করা হচ্ছে। ফসল আবাদের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা বিজ্ঞানকে কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ তারা কৃষিক্ষেত্রে লাভ করছে বিরাট সাফল্য। কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সুজলাসুফলা আমাদের এই দেশে বিজ্ঞানের জাদুর ছোঁয়া আমরা যত বেশি কাজে লাগাতে পরব ততই কৃষি আমাদের দেবে সােনালি ফসলসহ নানা ফসলের সম্ভার। কৃষকদের সচেতনতা, সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদের সাহায্য প্রদান এবং ভারতে কৃষি নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাই পারে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং ভারতকে কে একটি সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে।
প্রকৃতপক্ষে কৃষিপ্রধান দেশের জন্য কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কৃষিশিক্ষাকে গুরুত্ব সহকারে অনেকেই নিতে চান না । ক্ষমা করবেন উত্তরের প্রথমেই নেতিবাচকতা এনে ফেলছি।কিন্তু এটা বাস্তবধর্মী কথা।
একটি দেশ যার মূল ভিত্তি কৃষি, সেখানে কৃষিশিক্ষার অগ্রগতি একান্তভাবে কাম্য। সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে একমাত্র আধুনিক পন্থা অবলম্বন করেই এ অগ্রগতি ও উন্নতি আনা সম্ভব।
দেশের কৃষির বিভিন্ন সেক্টর যেমন- শস্য চাষ, প্রাণীসম্পদ, মাৎস্যসম্পদ, কৃষি প্রকৌশল,কৃষি অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তাসহ আরো অনেক কিছুর উন্নতির জন্য কৃষিশিক্ষা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, যেখানে রিসার্চ এবং কারিগরি জ্ঞানের বিশদ জানা যায়। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় যে শুধু জ্ঞান দান করে তা নয়। দেশের সার্বিক কর্মকান্ডেও অংশ নেয়।
এবার আসি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায়।
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে আধুনিক কৃষিব্যবস্থার পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাদের মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-
১. বিধান চান্দ্রা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহনপুর , নদীয়া , পশ্চিমবঙ্গ
২. উত্তর বঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ডিবাড়ি, কোচ বিহার , পশ্চিমবঙ্গ
৩. বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন, বীরভূম,পশ্চিমবঙ্গ
BADLA HIGH SCHOOL (H.S.)

বাদলা উচ্চ বিদ্যালয় (এইচ . এস .)
